শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস: আত্মত্যাগের স্মরণে জাতির শ্রদ্ধা
- By Jamini Roy --
- 14 December, 2024
আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছিল। তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় শিক্ষক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাযজ্ঞ আজও ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক অধ্যায় হিসেবে পরিচিত।
আজ সকালে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে জাতি শ্রদ্ধা জানায়। সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তাঁরা নীরবে দাঁড়িয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্য এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারাও বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সকাল থেকে সর্বস্তরের মানুষ জাতির মেধাবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমায়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, "১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যে আত্মত্যাগ করেছিলেন, তা আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নপূরণে দ্বিতীয়বার যে সুযোগ এসেছে, তা যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয়।" তিনি আরও বলেন, "জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে আমরা দেখেছি ছাত্ররা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে এটিই আমাদের প্রেরণা হওয়া উচিত।"
তিনি বলেন, "১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জাতির আত্মত্যাগ সত্ত্বেও আমরা স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে ব্যর্থ হয়েছি। একদলীয় মানসিকতা এবং শাসকদের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়। তরুণদের আত্মত্যাগের এই দ্বিতীয় সুযোগ রাষ্ট্রকে নতুনভাবে গড়ার প্রত্যয়ে কাজে লাগাতে হবে।"
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা জাতির মেধাবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। রাজধানী ঢাকার রায়েরবাজার ইটখোলা, মিরপুর বধ্যভূমি, এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের হাত-পা বাঁধা মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত।
জাতীয়ভাবে দিবসটি পালনে রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলায় আলোচনা সভা, বিশেষ মোনাজাত, এবং প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, এবং প্যাগোডাসহ সব উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, "শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। তাঁদের স্বপ্ন ও আদর্শ যেন তরুণ প্রজন্মের প্রতিজ্ঞায় বাস্তবায়িত হয়।" তিনি শহীদদের স্বপ্নের দেশ গড়ার লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।